সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ০১:৫০ অপরাহ্ন

অজুর রুহানি নেয়ামত ও ফজিলত…

অজুর রুহানি নেয়ামত ও ফজিলত…

ফিরোজ আহমাদ: অজু আরবি শব্দ। এর অর্থ সুন্দর, পরিষ্কার, স্বচ্ছ। মানবদেহের মধ্যে ত্বকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অজুর পানি প্রসাধনীর চেয়ে বেশি কার্যকরী। অজুর পানি চেহারার রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্তরের প্রশান্তি বৃদ্ধি করে। অন্তরে পবিত্রতা আনার ক্ষেত্রে বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জন করা একান্ত অপরিহার্য। অজু মনের খুশু-খুজু তথা একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। শরীরের ত্বককে সজীব ও শীতল করে। তাই নামাজে দ-ায়মান হওয়ার আগে অজু করার জন্য কোরআনে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মোমিনরা! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখম-ল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর।’ (সূরা মায়িদাহ: ৬)।
অজুর মধ্যে আল্লাহতায়ালা এত নেয়ামত বরাদ্দ রেখে দিয়েছেন, যা শুনলে অনেকে হয়তো আশ্চার্যান্বিত হয়ে যাবেন। কালেমা পড়া ব্যতীত যেমন মুসলমান হওয়া যায় না। তেমনি অজু ব্যতীত নামাজ আদায় করা যায় না। অজু ব্যতীত তাসবিহ পাঠ করা যায়। কিন্তু কোরআন স্পর্শ করা যায় না। অজু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বেহেশতের চাবি হচ্ছে নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৩/৩৪০)।
কোনো ব্যক্তি যখন অজু করা শুরু করে, তখন থেকেই তার গোনাহগুলো ঝরে পড়তে থাকে। হজরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসুল (সা) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং উত্তমরূপে অজু করে তার পুরো শরীর থেকে গোনাহ ঝরে পড়ে; এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (মুসলিম: ২৪৫)।
হাশরের ময়দানে সবার দৃষ্টি অজুকারী ব্যক্তির দিকে থাকবে। উপস্থিত সবাই অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে থাকবে। অজুকারী ব্যক্তির হাত, পা ও মুখম-লের মধ্যে নূর চমকাতে থাকবে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আমার উম্মতকে ডাকা হবে, তখন অজুর প্রভাবে তাদের হাত, পা ও মুখম-ল উজ্জ্বল ও আলোকোদ্ভাসিত হবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যার সামর্থ্য আছে সে যেন তার উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে নেয়।’ (বোখারি: ১৩৬)।
অজুকারী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। যেমনটি হজরত বেলাল (রা.) পেয়েছিলেন। একবার রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের সময় হজরত বেলাল (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে বেলাল! তুমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে আমল করেছ তার কথা আমাকে বল! কেননা জান্নাতে আমি তোমার জুতার আওয়াজ শুনতে পেয়েছি। হজরত বেলাল (রা.) বললেন, দিন বা রাতে যখনই আমি অজু করি তখনই আমি সামার্থ্য (তাহিয়্যাতুল অজু) অনুযায়ী নামাজ পড়ি। এছাড়া অতিরিক্ত তেমন কিছুই করি না।’ (বোখারি: ১০৮৩)।
অজু শেষে কালেমা শাহাদাত পাঠকারী ব্যক্তির জন্য আরও সুসংবাদ রয়েছে। অজু শেষ করে যে কালেমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সব নিয়ম-কানুনসহ উত্তমরূপে অজু করবে। এরপর ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু’ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম-তিরমিজি ও মিশকাত, পৃ. নং ৩৯)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু থাকা সত্ত্বেও নতুন অজু করে সে ১০টি নেকি লাভ করে।’ (অজুর ফাজায়েল: ২৫৩)।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877